ফেক নিউজ রোধে চট্টগ্রামে গণমাধ্যমকর্মীদের সংলাপ
ফেক নিউজ রোধে চট্টগ্রামে গণমাধ্যমকর্মীদের সংলাপ
বাংলাদেশে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার লক্ষ্যে ‘কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে নগরীর একটি হোটেলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ সংলাপের আয়োজন করেন। সংলাপে চট্টগ্রামে কর্মরত দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং স্থানীয় পত্রিকাগুলোর সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিক, ফ্যাক্ট-চেকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশগ্রহণ করেন।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভুল খবর ছড়ানো রোধে সাংবাদিকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এছাড়াও গুজব বা ভুল খবরের প্রচারণা রোধে ফ্যাক্ট চেকার এবং সাংবাদিকদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উপর তিনি জোর দেন।
আলোচনায় সাংবাদিকতার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং এর ফলে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার দিকটিও আলোচনা করা হয়। আলোচিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে তথ্য সংগ্রহে বাঁধা দেয়া বা তথ্য না দেয়া, সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব ও ভুল তথ্য প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়, রিপোর্টারদের নিয়মিত কাজের চাপ ও তার ফলে মানসম্পন্ন সংবাদের ঘাটতি, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মিডিয়া হাউজ ও তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন ইত্যাদি। এছাড়াও সংবাদ মাধ্যমে নির্ভুল তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্যাক্ট-চেকারদের সাথে সমন্বয় ও কিভাবে তথ্য যাচাই করা যায় তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান দাবি করেন, ‘আমরা বর্তমানে এমন একটি উত্তর-আধুনিক যুগে বাস করছি যেখানে সবকিছুতেই ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ রাজনীতিবিদরা মিথ্যা তথ্য ছড়ায় এবং সাংবাদিকরা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে সেই খবর প্রচার করে। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।’
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতায় ক্রস-চেকিং একটি আদর্শ অনুশীলন হওয়া উচিৎ। কিন্তু আজকাল সাধারণ জনগণ এত দ্রুত তথ্য গ্রহণ করে যে তারা সংবাদের উৎসগুলো পরীক্ষাও করতে চান না। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়াতে যেকোনো মতামত এবং চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার সময় সবার সচেতন থাকা উচিৎ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পরবর্তীতে এজেন্সি ফ্রান্স প্রেসের (এএফপি) ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দীন শিশির সাংবাদিকতাকে সত্যের অবতার হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি আরও বলেন, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রধান কিছু সংবাদপত্রও এমন ছদ্মবেশী শিরোনাম ব্যবহার করেন যেগুলির সাথে মূল সংবাদের কোনো মিল নেই। এ ধরনের সংবাদ শিরোনাম প্রচুর সমস্যার সৃষ্টি করে কারণ বেশিরভাগ পাঠক পুরো গল্পের পরিবর্তে শুধুমাত্র শিরোনাম পড়েন।’
পরিশেষে তিনি ভুয়া খবর কমানোর জন্য কিছু সাংবাদিকদের কিছু দায়বদ্ধ হওয়ার কথা বলেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্পষ্ট ও ভুল তথ্য প্রচারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
সংলাপের শেষ পর্বে গণমাধ্যমকর্মীরা একটি জরিপে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংবাদ মাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থার বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন।
‘কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ সিজিএসের ওই বিষয়ের উপর ধারাবাহিক কার্যক্রমের ষষ্ঠ আয়োজন এবং এরপরে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে এমন আলোচনা ও প্রশিক্ষণ আয়োজিত হবে। সংলাপের সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
সিজিএস হলো বাংলাদেশের একটি থিংক ট্যাংক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা ও গণমাধ্যম গবেষণা পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য হলো শাসন ব্যবস্থার মান উন্নয়ন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে সহজলভ্য সম্পদের কার্যকরী ও দূরদর্শী ব্যবহারের শর্তসমূহ উন্নত করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, এবং গণতন্ত্রায়ন, অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জন করার লক্ষ্যে একাডেমিক সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন অংশীদার প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সহযোগিতা সুবিধা সহজতর করা।
News Courtesy: