সমাজে গণতন্ত্র না থাকলে সাংবাদিকতাও সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না
সমাজে গণতন্ত্র না থাকলে সাংবাদিকতাও সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না
বাংলাদেশে বিভ্রান্তিমুলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার লক্ষ্যে গতকাল শনিবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) তাদের “কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক ধারাবাহিক সংলাপের তৃতীয় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। সংলাপে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিক, ফ্যাক্ট-চেকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশগ্রহণ করেন।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে, দেশে সাংবাদিকতার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো উঠে আসে এবং এর ফলে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার দিকটিও আলোচনা করা হয়। আলোচিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে তথ্য সংগ্রহে বাধা দেয়া বা তথ্য না দেয়া, সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও ভুল তথ্য প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়, রিপোর্টারদের নিয়মিত কাজের চাপ ও তার ফলে মানসম্পন্ন সংবাদের ঘাটতি, পর্যাপ্ত রিসোর্সের অভাব, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মিডিয়া হাউজ ও তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন ইত্যাদি। এছাড়াও, সংবাদ মাধ্যমে নির্ভুল তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্যাক্ট-চেকারদের সাথে সমন্বয় ও কিভাবে তথ্য যাচাই করা যায় সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়।
সংলাপে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিজিটালি রাইট- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক আসিফ বিন আলী, এজেন্সি ফ্রান্স প্রেস (এএফপি)- এর ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ আমেরিকান অ্যাম্বাসির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ইব্রাহিম মল্লিক। সংলাপের সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
আসিফ বিন আলী বলেন, কোভিড ১৯ চলাকালীন দেশে ধর্মীয় নেতারা বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য ও গুজব ছড়িয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিলো। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজের একটি অন্যতম অংশ। সমাজে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তবে সাংবাদিকতাও সেখানে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী অতীত ও বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতার তুলনা করে বলেন, ১০ বছর আগে ইনফরমেশন পাওয়ার উৎস আর এখনকার উৎস সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখন যেকোনো সংবাদ অনেকগুলো ধাপে পর্যালোচনা করে প্রচার করা হতো, কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটি দেখা যায় না। তিনি আরও যুক্ত করেন, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার এলগরিদমের ফলে যে যেই মতবাদে বিশ্বাসী তার কাছে কেবল ঐ তথ্যগুলোই পৌঁছায়।
কদরুদ্দিন শিশির বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ভুল তথ্য প্রচার করা হলে রিপোর্টারদের উচিত সে খবরের সত্যিটাও প্রচার করা অথবা একেবারেই সেই সংবাদ বা তথ্য প্রচার না করা। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
সংলাপের শেষ পর্বে গণমাধ্যম কর্মীরা একটি জরিপে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংবাদ মাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য উপস্থাপন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থার বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন।
সিজিএস’র “কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এ ধারাবাহিক কার্যক্রমটি ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে আয়োজিত হবে এবং সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
News Courtesy: