বাংলাদেশে সরকার, বিরোধী দলসহ সবাই ভুল তথ্য ছড়ায়: সিজিএস
বাংলাদেশে সরকার, বিরোধী দলসহ সবাই ভুল তথ্য ছড়ায়: সিজিএস
বাংলাদেশে সরকার ও বিরোধী দলসহ সবাই ভুল তথ্য ছড়ায় বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে মিস ইনফরমেশন (ভুল তথ্য) সরকার যেমন ছড়ায়, তেমনি বিরোধী দলগুলোও ছড়িয়ে থাকে। এরপর ধর্মভিত্তিক জায়গা থেকেও ছড়ানো হয়ে থাকে।’
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে ইএমকে সেন্টারে সিজিএস আয়োজিত ‘দ্য ওয়ার অ্যাগেইনস্ট মিস ইনফরমেশন কন্টিনিউস: সিএমআইবি র্যাপ আপ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতায় সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ভুল তথ্যের প্রক্রিয়া এবং ভুল তথ্য মোকাবিলার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে গত এক বছরে ‘বাংলাদেশে ভুল তথ্য মোকাবিলা’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এক বছরব্যাপী সারা দেশে ১৪টি সংলাপ ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি দল আওয়ামী লীগের ও আরেকটি বিএনপির। সব জায়গায় এই বিভক্তি রয়েছে। সাংবাদিকেরা এখন দূষিত, ঘুষখোর হয় উঠেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের মালিকদের নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ গণমাধ্যমের মালিক ও সম্পাদক একজন। তাঁরা সাংবাদিকতা কখনো করেননি। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভক্তি আছে।’
ভালো নির্বাচন মানেই ভালো গণতন্ত্র নয় জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘শুধু মিস ইনফরমেশন নিয়ে কথা বললে হবে না। আপনাকে আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে ঠিক করতে হবে। গণতন্ত্রের চেয়ে ভালো কিছু নেই। একটা ভালো নির্বাচন মানেই— এই না যে ভালো গণতন্ত্র আছে। আগে গণতন্ত্রের জায়গা ঠিক করতে হবে।’
ভুল তথ্যর বিরুদ্ধে সিজিএস সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভুল তথ্য যেকোনো ভাবেই ছড়াতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সংবাদমাধ্যম থেকে অনেক ক্ষেত্রে মিস ইনফরমেশন ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্য সিজিএস সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে কর্মশালা করেছে। সিজিএস চেষ্টা করছে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে। এটা সত্যি যে, কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিলেই মিস ইনফরমেশন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। তবে এমন কার্যক্রমগুলো চলমান থাকলে মিস ইনফরমেশন সম্পর্কে মানুষ সচেতন হবে।’
সিজিএসের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিজিএস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট অ্যালামনাই এনগেজমেন্ট ইনোভেশন ফান্ডের অর্থায়নে এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি বিস্তৃত ফ্যাক্ট-চেকিং প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করে এবং পাঁচটি বড় শহরে কর্মশালা পরিচালনা করে। প্রকল্পটি ভুল তথ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষামূলক ভিডিও বক্তৃতা এবং টিভি টক শোও পরিচালনা করেছে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিক, ফ্যাক্ট-চেকার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলর স্টিফেন ইবেলি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে প্রযুক্তির প্রভাব বাড়ছে, সাংবাদিকদের কাজ আরও কঠিন হচ্ছে। নিউ মিডিয়ার যুগে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ভুয়া তথ্য শনাক্ত করতে সাহায্য করবে এই প্রকল্প। তাই সিজিএসকে ধন্যবাদ জানাই।’
স্টিফেন ইবেলি আরও বলেন, ‘ভুয়া নিউজ আর ভুয়া তথ্যের প্রচার নিউ মিডিয়া প্রসারের সঙ্গে বাড়তেই থাকবে, কমবে না। সে ব্যাপারে হেলথ-চেকআপের মতো ফ্যাক্ট চেকিংয়ের কাজ ক্রমাগতভাবে করে যেতে হবে। ভুয়া তথ্যের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে জাতীয় পাঠ্যক্রমের সঙ্গে এ বিষয়টি যুক্ত করা যেতে পারে, যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং নরওয়েতে করা হচ্ছে, যাতে করে পরের প্রজন্মকে ফ্যাক্ট চেকিং নিয়ে শিক্ষিত করা যায়।’
দেশে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মিথ্যা সংবাদ ও গুজব প্রতিরোধে সিজিএসের ধারাবাহিক কার্যক্রমের এই সমাপনী অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্ন উত্তর পর্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় গণমাধ্যমে কর্মরত উপস্থিত সাংবাদিকগণ।
News Courtesy: