রাজশাহীতে ফেক নিউজ রোধে গণমাধ্যমকর্মীদের সংলাপ
রাজশাহীতে ফেক নিউজ রোধে গণমাধ্যমকর্মীদের সংলাপ
বাংলাদেশে বিভ্রান্তিমুলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার লক্ষ্যে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) রাজশাহীতে “কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি সংলাপের আয়োজন করে।
আজ শনিবার (১১ মার্চ) রাজশাহীর এক পাঁচতারকা হোটেলে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং স্থানীয় পত্রিকাগুলোর সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিক, ফ্যাক্ট-চেকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশগ্রহণ করেন।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে, দেশে সাংবাদিকতার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং এর ফলে বিভ্রান্তিমুলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার দিকটিও আলোচনা করা হয়। আলোচিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে তথ্য সংগ্রহে বাঁধা দেয়া বা তথ্য না দেয়া, সরকারের স্বদিচ্ছার অভাব ও ভুল তথ্য প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়, রিপোর্টারদের নিয়মিত কাজের চাপ ও তার ফলে মানসম্পন্ন সংবাদের ঘাটতি, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মিডিয়া হাউজ ও তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন ইত্যাদি। এছাড়াও, সংবাদ মাধ্যমে নির্ভুল তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্যাক্ট-চেকারদের সাথে সমন্বয় ও কিভাবে তথ্য যাচাই করা যায় তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
আলোচনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক, ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, “সরকার, বিরোধী দল, বিশেষ কোনো ব্যক্তি এবং অনেকসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে থাকেন। ফলে, গবেষণা অনুসারে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব তথ্য বিশ্বাস করতে পারছেন না।“
তিনি আরও বলেন, “আমরা বাস করছি তথ্যের মহাসমুদ্রে। এই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া কে তথ্যের উৎস থেকে বাদ দেয়া যাবে না”। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকতার প্রতিকূলতা এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।
পরবর্তীতে, ফ্যাক্ট চেকিং ইন্সটিটিউশন, ডিসমিস ল্যাবের প্রধান গবেষক, মিনহাজ আমান বলেন “সংবাদ প্রতিবেদকদের উচিৎ যেকোনো সংবাদ প্রতিবেদনের পূর্বে ফ্যাক্ট চেকিং এর বিষয়গুলো মাথায় রাখা”। তিনি আরও বলেন “ভুল তথ্য ছড়িয়ে পরার এই সমস্যা প্রশমিত করতে সম্পাদক, বার্তা-সম্পাদক, সহকারি সম্পাদক এবং প্রতিবেদক, সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিৎ”। তিনি উল্লেখ করেন “কোন মূলধারার মিডিয়া কোন ধরনের ভুল তথ্য ছড়িয়েছে সেসব চিহ্নিতকরণ এবং বিভিন্ন জাল খবর খুঁজে বের করার চেষ্টা তারা করে যাচ্ছেন”।
সংলাপের শেষ পর্বে গণমাধ্যমকর্মীরা একটি জরিপে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংবাদ মাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য উপস্থাপন রোধে কার্যকরি ব্যবস্থার বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন।
“কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ” সিজিএস’র উক্ত বিষয়ের উপর ধারাবাহিক কার্যক্রমের পঞ্চম আয়োজন এবং এর পরে ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে এমন আলোচনা ও প্রশিক্ষণ আয়োজিত হবে। সংলাপের সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।
উল্লেখ্য, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস) হলো বাংলাদেশের একটি থিংক ট্যাংক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা ও গণমাধ্যম গবেষণা পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য হলো শাসন ব্যবস্থার মান উন্নয়ন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে সহজলভ্য সম্পদের কার্যকরী ও দূরদর্শী ব্যবহারের শর্তসমূহ উন্নত করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, এবং গণতন্ত্রায়ন, অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জন করার লক্ষ্যে একাডেমিক সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন অংশীদার প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সহযোগিতা সুবিধা সহজতর করা।
News Courtesy: